01 Aug 2023, 06:17
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক কৃত্রিম উপগ্রহ কোম্পানি স্টারলিংক দিয়ে ইন্টারনেট সেবা দিতে চান। তার লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চল তথা গ্রাম। বাংলাদেশেও স্টারলিংক আসবে বলে খবর চাউর হয়েছে। যদিও এর আগে সরকার নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদের অনুমতি দেয়নি। টেলিকম নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি তাদের নিয়ে উদ্বেগে ছিল। উদ্বেগের কারণ ছিল বৈকি। দেশের মূল্যবান তথ্য বেহাত হতে খুব বেশি ভাবার কথা না। যদি অনেক টেলকো এখনো সন্দেহের বাইরে নয় ৷ তবে স্টারলিংক নিয়ে শুরুতেই ধাক্কা খাওয়ার মতো কথা এটাই ৷ যাই হোক আমাদের দেশে প্রচুর টাকা থাকলে অনেক কিছু করা সম্ভব। মানুষের পকেট কাটাতো আরও বেশি করে সম্ভব। খবর রটেছে স্টারলিংক ৯৯ ডলারে ইন্টারনেট প্যাকেজ বিক্রি শুরু করেও দিয়েছে। সরকারি অনুমোদন পেলে তারা কাজ শুরু করবে। কিন্তু অনুমোদনের আগেই তারা অফার শুরু করে দিয়েছে। বলছে, তারা নাকি গ্রামে সেবা দেবে। এরজন্য একটা ডিশের মতো এনটেনা ও একটা রাউটার লাগবে। সেগুলো বাড়ির নিদিষ্ট জায়গায় লাগালেই কেবল ইন্টারনেট মিলবে। এখানে একটা কিন্তু থেকে যাচ্ছে। নেটওয়ার্ক ঠিক মিলবে তো? প্রযুক্তিবিদরা প্রশ্ন তুলছেন কিন্তু। এরপর ডাউনলোড লিংক ঠিক পেলেও আপলোড হবে তো ঠিকঠাকমতো? এসব প্রশ্নের উত্তর এখন স্টারলিংকের কাছেও হয়তো নেই ৷ কারণ তারা পরীক্ষায় নেমে গিনিপিগ বানাতে চায়। তাও জনগণের পকেটের টাকাতেই ৷ ইলন মাস্ক ঝানু ব্যবসায়ী। যারা প্রযুক্তির খোঁজ রাখেন তারা তো জানেনই টুইটার কেনা নিয়ে কী কাণ্ডটাই করছেন তিনি। টুইট করে শেয়ারের দাম ফেলে দিয়েছেন। সে কথা থাক। তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রে স্টারলিংক প্রজেক্ট ফ্লপ। তিনি বিভিন্ন দেশে এখন ফেরি করছেন লোকাল ইন্টারনেট নামে। কিন্তু এটা কতটুকু সফল হবে বা এর সার্ভিস কেমন হবে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে।
এখন আসি আমার দেশের প্রেক্ষাপটে। ওপেন সিক্রেট হলো, মোবাইল ইন্টারনেটের নামে টেলকো প্রতিষ্ঠানগুলো লুটে খাচ্ছে জনগণকে। এক জিবি ধীরগতির ইন্টারনেটের দাম অজানা নয় কারও। স্টারলিংক আসলে এরা ধরা খাবে আগে। তবে, দেশের একমাত্র লোকাল ইন্টারনেট সেবাদাতা হিসেবে স্বাধীন ওয়াইফাইকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। স্টারলিংক যে ইন্টারনেট ৯৯ ডলারে বেচতে যাচ্ছে তা মাত্র ৯৯ টাকায় দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ইতিমধ্যে কয়েক হাজার গ্রাম ডিজিটাল করে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি। একজন ইন্টারনেট সংযোগ নিলে আরেকজনও সহজে স্বাধীন ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারছেন। কম খরচে এই সেবা পেতে কাস্টমার সাপোর্টও কাছেই। সবচেয়ে বড় সুবিধা। ডেটা নিশ্চয়তা। দেশের তথ্য বেহাত হবে না। ডাউনলোড ও আপলিংক নিয়ে ঝামেলা নেই। স্বাধীন ওয়াইফাইয়ের লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কম খরচে ইন্টারনেট নেওয়া ও মানুষকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। ইতোমধ্যে অনেকটাই এগিয়েছে দেশি প্রতিষ্ঠানটি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে গ্রামে দ্রুতগতির ইন্টারনেট নিতে হবে। আমরা কতোটা বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে স্বাধীন ওয়াইফাইয়ের মতো দেশী প্রতিষ্ঠানে আস্থা রাখব সেটা বিবেচনা করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, কোভিড মহামারি ও ইউক্রেনে যুদ্ধের পর অস্থির অর্থনীতির এই বিশ্বে আমরা মূল্যবান ডলার হারব কিনা সেটিও বড় প্রশ্ন।